সম্প্রতি ক্যাসিনো অভিযানের কারণে টাকা নিয়ে মানুষের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।এর মধ্যে বগুড়ার শাজাহানপুরে রাস্তা ও বিলের ধারে এক ট্রাক পরিমাণ ছেঁড়া টাকার কুঁচি কুঁচি স্তূপ নিয়ে এরই মধ্যে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটেছে।তবে এসবের ইতি টেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া কার্যালয় জানিয়েছে, এগুলো তাদের বাতিল ও অচল টাকা।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের পাশাপাশি আসপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়ে তুলকালাম পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে মোতায়েন করা হয় পুলিশ, জানা যায় মূল ঘটনা।
কেউ কেউ এই টাকার স্তূপ দেখে আত্মহারা হয়ে রীতিমতো লুটোপুটি খেয়েছেন সেখানে, কেউ কেউ আবার খবর শুনে বস্তা নিয়ে এসে তা সংগ্রহ করতে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। উৎসুক জনতার অনেকেই আবার সেখানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করেছেন। এরই একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে দু’হাতের মুঠিতে ও শরীরের উপর ছেঁড়া টাকার স্তূপ সাজিয়ে আত্মহারা এক যুবক কোনো এক অজানা খায়েশ মেটাতে ব্যস্ত। এই ছবিটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
অনেকেই ছবির কমেন্ট ঘরে নানা রকম মন্তব্য করেছেন। আনজাবিন রহমান সৌমিক নামে একজন লিখেছেন, ছেলেটি সম্ভবত টাকার বিছানায় ঘুমানোর খায়েশ পূরণ করছেন।মিনা আরিফুল জামান সোহাগ নামে অপর একজন লিখেছেন, তিনি মনে হয় টাকার গন্ধে জ্ঞান হারিয়েছেন। ইসরাত জাহান স্বর্ণা নামে আরেকজন লিখেছেন, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখো না যুবক, চোখটা একটু খুলো- দেখো তোমার ছেঁড়া কাঁথার মতো টাকাগুলোও ছেঁড়া।
তবে ঐ যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ছবিটি মূলত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, শুধু এই ছবি নয় এ ঘটনায় দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বস্তা বস্তা টাকা ফেলে দেয়ার তথ্য ছড়িয়ে পড়লে, নানা রকম গুজবে ছড়ায় উৎসুক জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ জানায়, এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফেলে দেওয়া বাতিল টাকার নোট। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়ার শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ব্যাংকিং) সরকার আল ইমরান গণমাধ্যমকে জানান, পার্চিং করা টাকা আগে পুড়িয়ে ফেলা হতো। কিন্তু পরিবেশ দূষণের কারণে টাকাগুলো কুচি কুচি করে ময়লা হিসেবে পৌরসভার মাধ্যমে বস্তায় ভরে বিলে ফেলে দেয়া হয়।
সাধারণ মানুষ ভাবছেন এই টাকা হয়তো লুকাতে না পেরে এখানে ফেলে রেখেছে। আসলে কী তাই? এই বস্তা বস্তা কুটি টাকা রাস্তার পাশের ডোবায় কীভাবে এলো? তবে এসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে।
বিপুল পরিমাণ কুচি কুচি টাকায় বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বগুড়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এগুলো বাতিল ও অচল টাকা। তাই ফেলে দেয়া হয়েছে। কারণ এগুলো পুড়ানোর নিয়ম নেই।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাতিল নোট পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট কুচি কুচি করে কেটে ফেলে দেওয়ার নিয়ম। আর জালশুকা এলাকায় পাওয়া টাকার কুচি বাংলাদেশ ব্যাংকের অচল ও বাতিল হিসেবে ফেলে দেওয়া টাকা।
বগুড়া কার্যালয়ে কুচি করা টাকার ১ হাজার ৮০০ বস্তা জমা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অচল ২৪০ বস্তা টাকা ফেলে দেয়ার জন্য গত ২২ আগস্ট এই এলাকার পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়।
পরে পৌরসভা ট্রাকে সেগুলো সেখানে নিয়ে ফেলে। পরিবেশের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে টাকা পোড়ানো হয় না।এগুলো কোথাও ফেলে দেওয়াই নিয়ম।
You must be logged in to post a comment.